হলুদ দুধ খাওয়ার উপকারিতা
ঔষধি গুনাগুন সম্পূর্ণ হলুদ দুধের উপকারিতা সম্বন্ধে কম বেশি সবাই জানে। প্রাচীনকাল থেকে হলুদ মিশ্রিত দুধ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি, কাশি, ঠান্ডা লাগা, শারীরিক ব্যথা সহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে এক গ্লাস হলুদ মিশ্রিত দুধ হতে পারে প্রাকৃতিক সমাধান।
এছাড়া যে কোনো ধরনের সংক্রমণ ছাড়াতে হলুদ মিশ্রিত দুধ বেশ উপকারী। দুধে হলুদ মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার মিলে একথা সবাই জানে। যদি আপনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে চান তবে হলুদের দুধের বিকল্প কিছু হতে পারেনা।
পেজ সূচিপত্র: হলুদ মিশ্রিত দুধ খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা জেনে নিন
গর্ভাবস্থায় হলুদ দুধের উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় হলুদ দুধ খাওয়া হলে তা কোন গর্ভবতী মহিলার দেহে তার হরমোনিও
ভারসাম্যহীনতার কারণে ঘটে থাকা বিভিন্ন পরিবর্তনগুলি যেমন জল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি
এবং দুর্বল অনাক্রম্যতা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে যেহেতু এ সময়
ক্রমবর্ধিত ভ্রণ এবং বর্ধিত জরায়ুর কারণে অভ্যন্তরীণ অঙ্গানু গুলির ওপর চাপ
বৃদ্ধি হয় যা গর্ভবতী মহিলাকে কিছুটা কহিল করে দেয় তাই এ সময় হলুদ দুধ পান
করলে তা গর্ভাবস্থায় একটি মহিলাকে শক্তি যোগায়।
সুতরাং হলুদ দুধ পান করলে তা বমি বমি ভাব এবং অস্বস্তি কম করে গর্ভাবস্থায়
তুলনামূলক একটি স্বাচ্ছন্দ্য দায়ক অভিজ্ঞতা করে তোলে তাই গর্ভাবস্থায় হলুদ দুধ
খাওয়া অনেক উপকারী। আবার অনেকে মনে করেন গর্ভাবস্থায় হলুদ দুধ সেবন করলে
বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয় এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা পায়।
সর্দি কাশির জন্য দুধ হলুদের উপকারিতা
শীতকালীন আবহাওয়ায় ঘরে বসে সর্দি কাশি লেগে আছে। গরম দুধে এক চামচ হলুদ খেলেই
হবে সমস্যার সমাধান। তাই টানা কাশির হাত থেকে রেহাই পেতে রোজ রাতে ঘুমানোর আগে
গরম দুধে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে সন্তানকে খাওয়ালে ঠান্ডা থেকে দূরে রাখা
যাবে।এছাড়া বড়রাও এটা খেলে উপকার পাবেন।
হলুদে কারকিউমিন ভরপুর মাত্রায় থাকে। এই যৌগ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
সাহায্য করে।হলুদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের সব কোষ কে নানা রকম ক্ষতির হাত
থেকে রক্ষা করে ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা যেমন কমে সংক্রমণ হলে তার সেরে যায় সহজে।
তাই সব বয়সী মানুষের সর্দি কাশির জন্য দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
অনেক।
হজমের জন্য হলুদ দুধ উপকারী
যাদের হজমের সমস্যা আছে তাদের জন্য হলুদের দুধ বিশেষ উপকারী। হলুদে থাকা কার
কিউমিন পিত্তের উৎপাদনকে উৎসাহিত করে। যা কার্যকর হজম এবং খাদ্যের চর্বি ভাঙ্গার
জন্য অপরিহার্য গ্যাস তৈরি হওয়ার রোধ করে। এবং ফোলা ভাব কমিয়ে হলুদের দুধ
পরিপাকতন্ত্রের জন্য প্রশান্তি দায়ক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
এর এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য গুলি পাচনতন্ত্রকে শান্ত রাখতেও ভূমিকা পালন করে।
এটিকে বদহজম এবং সম্পর্কিত লক্ষণগুলির জন্য একটি মৃদু অথচ শক্তিশালী প্রতিকার করে
তোলে। ডায়রিয়া এবং পেটের আলসারের মতো বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে দুধ হলুদ
অত্যন্ত কার্যকরী।
কোষের ক্ষতিকর বিরুদ্ধে লড়াই
হলুদ দুধ এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি পানীয়। হলুদের কারকিউমিন নামক
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বর্তমান। তাছাড়া দুধও শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা
বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। একটি কোষের যেকোনো ধরনের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং
শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
বিভিন্ন রোগ ও সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতেও সহায়তা করে।
হলুদ দুধ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত সহায়ক। এটি রক্তনালী পরিষ্কার করে।
তাই হলুদ দুধ রক্ত পরিশোধ হিসেবে কাজ করে, হলুদ দুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে
শক্তিশালী করে বিভিন্ন ধরনের সংগ্রাম হতে রক্ষা করে।
আঘাত ও রোগবালাই নিরাময় করে
দেহের বাইরের বা অভ্যন্তরীণ অংশে কোন আঘাত থাকলে হলুদ মিশ্রিত দুধ পান করলে এটি
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাময়ে সহায়তা করে। কারণ হলুদ দুধ আন্টিব্যাকটেরিয়াল এবং
অ্যান্টিসেটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ব্যাকটেরিয়াকে বাড়াতে দেয় না।
এক গ্লাস হলুদ মেশানো দুধ পান করলে যেকোনো ধরনের মাথা ব্যথা দূর হয়ে যায় এটি
ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। অনেকের দুধ খেলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে হলুদ আর দুধ
একসঙ্গে খেলে গ্যাসের সমস্যা অনেক অংশে দূর হয়ে যায়। তাই হলুদ দুধ একসাথে খেলে
খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায়।
ত্বকের জন্য হলুদ দুধ উপকারী
প্রতিদিন নিয়মিত হলুদ মিশ্রিত দুধ পান করলে ত্বক সুন্দর থাকে। সতেজ টানটান ত্বক
পেতে ও ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া ঠেকাতে হলুদ দুধ খুবই উপকারী। পাশাপাশি এটি ব্রণ
নিরাময় করতে পারে। গুড়া হলুদ সরাসরি ত্বকে লাগালেও ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া
হলুদের দুধ হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
পিরিয়ডের সমস্যা থাকা মহিলাদের জন্য এটি বেশ কার্যকর। হলুদে থাকা বিভিন্ন যৌগ
শরীরে কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে। এতে ভালো মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায়
ত্বকের জেল্লাও বাড়ে। তাই হলুদ মিশ্রিত দুধ শরীরের জন্য ত্বকের জন্য খুবই
উপকারী। অনেকে বলে হলুদ মিশ্রিত দুধ খেলে ফর্সা হওয়া যায়।
ওজন কমাতে হলুদ দুধ উপকারী
যারা ওজন নিয়ে চিন্তিত এবং ওজন কমাতে চান তারা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করতে
পারেন এক গ্লাস গরম গরম হলুদ মিশ্রিত দুধ। এটি দেহের অতিরিক্ত চর্বি দূর করে ওজন
কমাতে সাহায্য করে। হলুদের থার্মোজেনিক নামক এক ধরনের উপাদান থাকে যা শরীরের
মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে ক্যালরিও কমায় হলুদের রয়েছে ফাইবার
যা শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে কার্যকারী ভূমিকা রাখে।
আবার দুধে থাকা প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম একদিকে যেমন শরীরের পুষ্টি বৃদ্ধি করে
অন্যদিকে মেদ ঝরিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এর
ভূমিকা অনেক। খুদা নিয়ন্ত্রনেও সাহায্য করতে পারে এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য আবাসের
দিকে পরিচালিত হওয়াতে প্রতিরোধ করতে পারে। হলুদ দুধ আপনার শরীরকে পুষ্টিকর উপাদান
গুলি দক্ষতার সাথে দিয়ে থাকে। তাই দৈনন্দিন রুটিনে হলুদ দুধ অন্তর্ভুক্ত থাকা
জুরুরি।
হলুদ দুধের প্রস্তুত প্রণালী
*প্রয়োজনীয় উপকরণ:
*কাঁচা হলুদ ১ ইঞ্চি টুকরা করা
*তরল দুধ ২২০ মিলি
*চিনি অথবা মধু স্বাদমতো
*গোল মরিচ গুঁড়ায় এক চিমটি
প্রথমে একটি পাত্রে হলুদ কুচি ও দুধ একসঙ্গে ফুটিয়ে নিন চুলা থেকে নামিয়ে ঢেকে
রাখুন কিছুক্ষণ গরম থাকতে থাকতে ছেকে মধু অথবা চিনি মিশিয়ে নেবেন। চাইলে কাঁচা
হলুদের বদলে হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে বানাতে পারেন হলুদ মিশ্রিত দুধ।
হলুদ মিশ্রিত দুধের অপকারিতা
যে কোন জিনিসের যেমন উপকারিতা আছে তার তেমন অপকারিতাও রয়েছে। অনেকে আইয়রনের
ঘাটতি পূরণের জন্য নানা ধরনের খাবার খান, তবে যাদের এই ঘাটতি আছে তারা হলুদ
মেশানো দুধ একেবারেই পান করবেন না। কারণ হলুদ দুধে উপস্থিত আয়রন শোষণে বাধা
সৃষ্টি করে এবং শরীরের রক্তস্বল্পতা সৃষ্টি করতে পারে, তাই যাদের শরীরে আয়রনের
ঘাটতি আছে তারা হলুদ মেশানো দুধ এড়িয়ে চলবেন।
অতিরিক্ত হলুদে থাকা কারকিউমিনের কারণে কিছু মানুষের পেটে গ্যাস ও বা বমি বমি ভাব
হতে পাএর। যাদের পাকস্থলীতে আলসার বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা আছে তাদের জন্য হলুদ ও
দুধের মিশ্রণ গ্যাস্টিক বাড়াতে পারে।হলুদ রক্ত পাতলা করার প্রভাব ফেলে তাই যারা
রক্ত পাতলা করার ওষুধ সেবন করছেন তাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কিছু
গবেষণায় দেখা গেছে যে কারকিউমিন হরমোনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বিশেষ করে যাদের
হরমোন সম্পর্কিত অসুখ আছে তাদের ক্ষেত্রে।
কিছু মানুষের হলুদে এলার্জি থাকতে পারে, চুলকানিও হতে পারে, তবে সাধারণ পরিমানে
খেলে সাধারণত এই সমস্যাগুলো দেখা যায় না। তাই দুধে হলুদ মিশে খেতে হবে পরিমাণ
মতো অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। সুতরাং দুধে হলুদ মিশে খাওয়ার উপকারিতা পেতে
হলে পরিমাপ মতো খাওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেয়া
প্রয়োজন।
আমাদের শেষ কথা
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুগণ দুধে হলুদ মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এই
প্রতিবেদনটির একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি আশা করি সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি
পড়েছেন এবং পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিত হয়ে জানতে পেরেছেন দুধে হলুদ মিশিয়ে
খাওয়ার উপকারিতার অপকারিতা।
দুধে হলুদ মিশ্রন খাওয়ার অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা অনেক বেশি তাই পরিমাণ মতো
খাবেন প্রয়োজন হলে কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে
পারেন।প্রতিবেদনের সম্পর্কে আপনার যদি কোন মতামত থাকে তবে আপনি কমেন্ট বক্সে
জানাতে পারেন এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে এই প্রতিবেদনটির সাথে থাকার জন্য
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url