আখরোট খাওয়ার দশটি স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নিন বিস্তারিত

 আখরোটের দশটি স্বাস্থ্য উপকারিতা 


বাদাম কে না খেতে পছন্দ করে। আর যারা বাদাম পছন্দ করেন, তাদের কাছে পরিচিত নাম হল আখরোট। তবে ফ্যাট আছে মনে করে অনেকে এ বাদাম খায় না। এতে থাকা ফাইবার প্রোটিন ও ফ্যাটি এসিড নানাভাবে শরীরের উপকার করে থাকে।

আখরোট খেলে ক্যান্সার হ্রদরোগ সারানোর পাশাপাশি সাহায্য করে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক রাখতেও কালো কিংবা বাদামি দুই ধরনের আখরোটই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তাই জেনে নিন নিয়মিত আখরোট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্র: আখরোট খাওয়ার দশটি স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নিন

গর্ভাবস্থায় উপকারিতা

গর্ভবতী নারীর জন্য প্রতিদিন আখরোট খাওয়া উপকারী। আখরোটে আছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যেমন ফোলেট, রাইবোফ্লাভিন এবং থিয়ামিন। এগুলা হবু মায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আখরোটে থাকা ফলিক এসিড গর্ভবতী ও অনাগত সন্তানের জন্য উপকারী।

গর্ভবতী মায়েরা আখরোট খেলে এতে থাকা পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড গর্ভের শিশুর এলার্জির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। 

আখরোট হাড় মজবুত করে

আখরোটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এটি শরীরের হাড় মজবুত করতে খুবই উপকারী। ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা না থাকলে ৩০ এর বেশি বয়সী মহিলাদের জন্য হাড় মজবুত রাখতে এটি অনেক ভালো কাজ করে।

আখরোটে আছে আলফা লিনো লেলিন এসিড নামে একটি প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। এই এসিড হারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে সেই সঙ্গে আখরোটে থাকা ও মেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড হারকে ভালো রাখে।


হৃদযন্ত্র ভালো রাখে

সুস্থ থাকার জন্য হৃদযন্ত্র বা হার্ট ভালো রাখার বিকল্প নেই। আর আপনাকে এই কাজে সাহায্য করতে পারে আখরোট। এতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের জন্য উপকারী। এই বাদামের মধ্যে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড রয়েছে।

আপনি যদি প্রতিদিন কয়েকটি করে আখরোট খান তবে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করবে। এটি আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের বাড়াতে সাহায্য করে তাই হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে নিয়মিত আখরোট খান। 

মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নয়ন করতে সাহায্য করে আখরোট। এ বাদামে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যা মস্তিষ্কের উন্নতি ও মেধা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।মস্তিষ্কের কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে, স্মৃতিশক্তি বাড়ে এবং নিউরোলজিক্যাল আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

আখরোট দেখতে কিন্তু অনেকটা আমাদের মস্তিষ্কের আকৃতির মত। এ বাদাম আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশেও সাহায্য করে। তাই নিয়মিত আখরোট খেতে পারেন।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

মরণঘাতি রোগ ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে আখরোট। এতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ইউরোলিথিন অ্যান্টি ক্যান্সার বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। তাই স্তন কোলন এবং প্রোটেস্ট রোধে বড় ভূমিকা রাখে আখরোট। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ জানিয়েছে আখরোট খেলে তা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে যে কোন অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন হয়ে যায়। করোনা মহামারীর এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি আমরা একটু হলেও মনোযোগী হয়েছি। এ কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে আখরোট। এতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট ইমিউন সিস্টেমকে ঠিক রাখে।

 আখরোটে আছে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ যেমন তামা এবং ভিটামিন বি সিক্স যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। তাই নিয়ম করে প্রতিদিন আখরোট খাওয়া দরকার। 

ভালো ঘুমের জন্য উপকারী

আখরোটে আছে পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম আয়রনের ঠাসা আখরোট হজম শক্তিতে বাড়িয়ে দিতে সুবিধা করে দেয়। আর উন্নত হজম শক্তি ভালো ঘুমের সাহায্য করে। এতে থাকা মেলাটোনিন ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক। আখরোটে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফেটে অ্যাসিড রক্তচাপকে কম রাখে এবং স্ট্রেস উপশম করে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আখরোট খেলে ভালো ঘুম হয়। অনিদ্রার সমস্যা থাকলে আখরোট রাখুন খাবারের তালিকায়। 

ওজন ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে

আখরোটে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, কপার ও জিঙ্ক রয়েছে। নিয়মিত আখরোট খেলে বিপাক ভালো হয়। যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া আখরোট পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভূত হতে সাহায্য করে, ফলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

উচ্চ চর্বি থাকা সত্ত্বেও, আখরোট ওজন নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে পারে। আখরোট ফাইবার, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং প্রোটিনের সংমিশ্রণ পূর্ণতার অনুভূতিকে উন্নত করতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে করে। উপরোক্ত আখরোট পুষ্টি বিপাক বাড়াতে এবং চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে।

টাইপ টু ডায়াবেটিস পরিচালনায় সাহায্য করতে পারে

একটি সুষম খাদ্যে আখরোট অন্তর্ভুক্ত করা টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপকার করতে পারে। এ বাদামে কার্বোহাইড্রেট কম এবং ফাইবার কন্টেন্ট বেশি যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নয়ন করতে সাহায্য করতে পারে। উপরন্ত আখরোটে পাওয়া স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং উদ্ভিদ যৌগগুলি ভালো গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখতে পারে।প্রদাহ কম করতে পারে যার ডাইবেটিস পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চিকিৎসকরা বলেন যে, যে কোন ধরনের বাদামী ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বিশেষত যারা নিয়মিত আখরোট খান তাদের টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেকটাই কম হয়।


আখরোট মানসিক চাপ কমায়

আখরোটে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি থাকে, যা চামড়াকে বুড়িয়ে যেতে বাধা দেয়। বলা যায় ভিটামিন বি হল স্ট্রেস রিলিভার ও মুড ম্যানেজার। স্ট্রেস কম থাকলে ত্বকের চামড়া উজ্জ্বল হয়। ভিটামিন বি এর সঙ্গে ভিটামিন ই এসে তার শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে।

আখরোটের অপকারিতা

যে কোন খাবারই প্রয়োজন এর অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। কারণ তাতে শরীরে পুষ্টি উপাদান গুলো বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে তাই অন্যান্য খাবারের মতোই আখরোটও প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া যাবেনা আপনি যদি আখরোট বেশি খেয়ে ফেলেন তবে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন- 

*এলার্জি হতে পারে

*লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে

* কালো আখরোটে থাকা ফাইটেটস শরীরের আয়রন চুষে নিতে পারে ফলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা যেতে পারে

আমাদের শেষ কথা

আখরোট একটি সত্যিকারের সুপার ফুড। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং হার্টের স্বাস্থ্যকে সমর্থন করার থেকে শুরু করে ওজন ব্যবস্থাপনার প্রচার এবং প্রদাহ কমাতে এ পুষ্টি ঘন বাদামগুলি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। 

তাই আমাদের দৈনন্দিন খাবার তালিকায় আখরোট রাখা অত্যন্ত জরুরী প্রতিদিন সকালে কিংবা রাতে ঘুমানোর আগে আখরোট খেলে ভালো হয়। পুষ্টিবিদরা বলেছেন, আখরোট পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া ভালো। তবে দুধ কিংবা মধুর সঙ্গে আখরোট খাওয়া যেতে পারে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের নিয়মিত পাঁচটি আখরোট খাওয়াতে যথেষ্ট বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url