লাইলাতুল কদরের মর্যাদা ও ফজিলত
ইসলামে লাইলাতুল কদর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতপূর্ণ একটি রাত। এটি এমন এক রাত যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এই রাতকে আল্লাহর বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই রাতে বান্দাদের জন্য অশেষ রহমত বর্ষিত হয়।
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সালাম এই রাত্রি পাওয়ার জন্য শেষ দশকে আজীবন ইতিকাফ করেছেন। এ রাতে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়। যে রাতে পবিত্র কোরআন নাযিল হয়েছে সেই রাতে লাইলাতুল কদর।
পেজ সূচিপত্রঃ লাইলাতুল কদরের মর্যাদা ও ফজিলত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
- লাইলাতুল কদর কি?
- লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
- লাইলাতুল কদরের ফজিলত
- কোরআন হাদিসের লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব
- লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট রাত
- লাইলাতুল কদরের রাতে কি করা উচিত
- লাইলাতুল কদরের বিশেষ দোয়া ও আমল
- লাইলাতুল কদর ও আত্মশুদ্ধি
- লাইলাতুল কদরের রাতের উপহার ও পুরস্কার
- পাঠকের শেষ কথা
লাইলাতুল কদর কি?
শবে কদর ফার্সি বা লাইলাতুল কদর আরবি এর অর্থ "অতিশয় সম্মানিত ও মহামান্বিত রাত বা "পবিত্র রজনী"। ফারসি ভাষায় "শাব" ও আরবি ভাষায় "লাইলাতুল" অর্থ হল রাত্রি বা রজনী, অন্যদিকে 'কদর' শব্দের অর্থ সম্মান,মর্যাদা, মহাসম্মান। এছাড়া এর অন্য অর্থ হল ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা।
এ রাতে আল্লাহ তাআলা পুরা কুরআন কারীমকে লাউহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে নাযিল করেন। তাছাড়া অন্য একটি মত আছে যে এ রাতে কুরআন নাযিল শুরু হয়। পরবর্তী 23 বছরে বিভিন্ন সূরা বা সূরার অংশবিশেষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনা ও অবস্থার প্রেক্ষিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর ওপর অবতীর্ণ হয়।
এ এক রজনীর এবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। এক রাতে পৃথিবীতে অসংখ্য
ফেরেস্তা নেমে আসে এবং তারা তখন দুনিয়ার কল্যাণ বরকত রহমত বর্ষণ করতে থাকে। এটা
শান্তি বর্ষণের রাত। এ রাতে ইবাদত এর মাধ্যমে ফেরেশতারা জাহান্নামের আজাব
থেকে মুক্তির বাণী শুনায়। এ রাতে নফল সালাত আদায় করলে মুমিনদের অতীতের সগিরা
গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে আমাদের নবী এ রাতটি পাওয়ার জন্য শেষ দশকে আজীবন ইতেকাফ করেছেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাম্মাদ এ উদ্দেশ্যে বলেছেন যে আমি কদরের রাতের সন্ধানে রমজান মাসের প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী দশ দিন। তারপর আমার ওপর একটি ওহী নাযিল হলো এবং জানানো হলো তা শেষ ১০ দিনে রয়েছে।
লাইলাতুল কদর রাত মর্যাদার। এ রাতে দুনিয়ার মানুষের ভাগ্য নতুন করে সাজানো হয়। গুনাহে নিমজিত বান্দা আলো ঝলমলে জীবন লাভ করে। পরবর্তী বছরের পথ ও পথের সব কিছু পেয়ে থাকে। এজন্য এ রাত্রি মুসলিম উম্মতের কাছে মর্যাদা পূর্ণ।
লাইলাতুল কদরের ফজিলত
হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এই রাত। এ রাতে ইবাদত করলে হাজার মাস এবাদত করার চেয়েও
বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি
লাইলাতুল কদর ঈমান ও আসার সঙ্গে ইবাদত করবে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া
হবে। এ রাতে ফেরেস্তাগণ দুনিয়াতে নেমে আসেন এবং কল্যাণ বরকত ও রহমত বিতরণ করেন।
অনেক হাদিসে বর্ণিত আছে এই রাতে পরবর্তী বছরে ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়।
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা ও ফজিলত অনেক। এ রাতের গুরুত্ব অপরিসীম কুরআনের সূরা
কদরের উল্লেখ আছে হাজার মাস উপাসনা যে পূর্ণ হয় কদরের এক রাতের
উপাসনা তার চেয়ে উত্তম। লাইলাতুল কদরের রাতে আল্লাহর রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত
হয়।লাইলাতুল কদরে আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে নাজাত মাগফিরাত ও ক্ষমা পাওয়ার সব
থেকে বড় সুযোগ। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বিশ্বনবী বলেছেন যে ব্যাক্তি এই রাতে
ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে আল্লাহ তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন।
কোরআন হাদিসের লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব
- কোরআন ও হাদিসে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে
- সূরা কদরঃ এই সুরাতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে "এটি হাজার মাসের চেয়ে উত্তম"।
- সূরা দুখানঃ "আমরা এক বরকতময় রাতে একটি নাযিল করেছি"।
- হাদিসঃ রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন তোমরা "রমজানের শেষ দশকের বিজয় রাত গুলোকে লাইলাতুল কদর তালাশ কর"।
লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট রাত
লাইলাতুল কদরের সঠিক তারিখ সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে অধিকাংশ উলামাদের
মতে এটি রমজানের শেষ দশকের বিজর রাতগুলো(২১-২৩-২৫-২৭-২৯) মধ্যে একরাতে সংঘটিত
হয়। অনেক হাদিসের ২৭তম রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদিস অনুযায়ী ২০ রমজানের পর যে কোন বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর হতে পারে। তবে আলেমদের মতে ২৬ রমজান দিবাগত রাত্রি লাইলাতুল কদর আসে। হাদিসে উল্লেখ আছে যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিন শবে কদর সন্ধান করো।
আরেকটি হাদিসে বিশ্বনবী বলেছেন, মাহে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলো তোমরা শবে কদরের সন্ধান করো। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর স্ত্রী হযরত আয়েশা(রাঃ) শবে কদর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হে রাসূলুল্লাহু আমি যদি লাইলাতুল কদর পায় তখন কি করব। তখন আমাদের নবী বলতেন এই রাত হচ্ছে ক্ষমার রাত এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে এবং এই রাতে কুরআন নাযিল হয়েছিল।
লাইলাতুল কদর রাতে কি করা উচিত
- নামাজ পড়াঃ অতিরিক্ত নফল নামাজ পড়া উত্তম
- কুরআন তিলাওয়াতঃ কোরআন তেলাওয়াত করা এই রাতে অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ।
- দোয়াঃ বেশি বেশি দোয়া করা উচিত, বিশেষিত নিম্নলিখিত দোয়াটি পড়া উচিত-
- "আল্লাহমা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি" এর অর্থ হলো-"হে আল্লাহ তুমি ক্ষমাকারী তুমি ক্ষমা করাকে পছন্দ করো সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও"।
- জিকির ও তাজবীহঃ আল্লাহ নামের তাসবিহ ও জিকির করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলত পূর্ণ।
- গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করাঃ দান সাদকা করা ও সৎকাজ করা উচিত।
লাইলাতুল কদরের বিশেষ দোয়া ও আমল
লালাতুল কদরের রাতে নিম্নোক্ত দোয়া ও আমল বেশি বেশি করা উচিত-
- তাহাজ্জুদ নামাজঃ রাতে জাগ্রত থেকে তাহাজ্জুদ পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- সূরা ইখলাস, সূরা নাস, সূরা কদর, সূরা ফালাক বারবার পড়া।
- দোয়া ও ক্ষমাপ্রার্থনাঃ নিজের পরিবার ও উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।
- দান সাদকাঃ গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা।
লাইলাতুল কদর ও আত্মশুদ্ধি
লাইলাতুল কদর কেবল ইবাদতের রাত নয় বরং এটি আত্মশুদ্ধির ও রাত এ রাতে আত্ম জিজ্ঞাসা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মানুষ তার গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের সুযোগ পায়। এ রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া উচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমানের সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়।
তার আগেকার সব পাপ মার্জনা করে দেয়া হয়। লাইলাতুল কদরের যা যা করা যায় নফল নামাজ আদায় করা, কোরআন তেলাওয়াত করা, কবর জিয়ারত করা, তওবা কর, জিকির করা আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা গবেষণা গরিবদের দান করা। এইভাবে লালাতুল কদরের রাতে আত্মশুদ্ধি করা যায়।
লাইলাতুল কদরের রাতের উপহার ও পুরস্কার
লাইলাতুল কদর এর রাত যা বান্দার জন্য বিশেষ উপহারের সমৃদ্ধ। এ রাতে আল্লাহ যে
উপহারগুলো বান্দাদের দিয়ে থাকেন-
- আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়
- মাফ পাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়
- হাজার মাসের ইবাদতের সওয়াব লাভ করা যায়
- জান্নাতের নৈকট্য লাভ করা যায়
পাঠকের শেষ কথা
লাইলাতুল কদর মর্যাদা ও ফজিলত অনেক। এটা হচ্ছে আত্মশুদ্ধির রাত। এই রাতে বিগত
বছরের গুনাহ মাফ করা হয় বলে জানা যায়। বিভিন্ন ধরনের আমলের মাধ্যমে এর রাতে
আল্লাহর ইবাদত করা হয়ে থাকে। এই রাত্রে ফেরেশতারা বান্দাদের অনেক নিকটে চলে
আসে। এবং আল্লাহর কাছে তাদের সকল মনোবাসনা পৌঁছে দেয়। তাই এই রাতের মর্যাদা
ফজিলত অনেক।
এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আর্টিকেলটি শুরু
থেকে শেষ পর্যন্ত আপনি খুব সুন্দর ভাবে পড়েছেন। এবং বুঝতে পেরেছেন লাইলাতুল
কদরের মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে। এরকম আরো ইসলামিক পোস্ট সম্পর্কে জানতে হলে
আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করকে নিয়মিত আমরা এ ধরনের আর্টিকেল দিয়ে
থাকি। এখানে আপনারা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url