খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা
পেজ সূচিপত্রঃ খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা
- খালি পেটে নিমপাতা রস কেন খাবেন
- নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা
- রোগ প্রতিরোধে নিম পাতার ভূমিকা
- প্রতিদিন নিম পাতা খেলে কি হয়
- নিম পাতা ব্যবহারের ক্ষতির দিক
- নিম পাতার রস খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- নিম পাতার রস তৈরির পদ্ধতি
- নিম পাতার পুষ্টিগুণ
- পাঠকের শেষ কথা
খালি পেটে নিম পাতার রস কেন খাবেন
নিম পাতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি
ইনফ্লামেটরি গুণ শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখে নিমপাতা শরীরের প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়িয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়া বা
নিম পাতা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
নিম প্রকৃতপক্ষে একটি ওষুধি গাজার ডাল পাতা, ফুল ফল সবারই উপকারিতা রয়েছে। কথাই বলে নিম গাছের হাওয়াও শরীরের জন্য ভালো। নিম গাছের পাতার বিশেষত্ব হলো এটিতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। এ পাতায় রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টি ভাইরাল বৈশিষ্ট্য যা একে আরো শক্তিশালী করে তোলে।নিম পাতার রয়েছে রোগ প্রতিরোধকারী ক্ষমতা।
যার ফলে নানা রকম রোগের চিকিৎসা একটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খালি পেটে
নিমপাতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। খালি পেটে নিমপাতা খেলে পেটে কৃমি হয় না।
নিম পাতার রস খেলে বুকের ব্যথা কমে যায়। হজম শক্তি উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর
করে, মানসিক চাপ কমায় তাই নিয়ম করে খালি পেটে নিম পাতা খাওয়া অত্যন্ত
জরুরি।
নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের আশেপাশে গাছগুলোর মধ্যে অন্যতম সুপরিচিত ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন একটি গাছ হল
নিম গাছ। নিম গাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিম গাছের প্রত্যেকটি অংশের
উপকারিতা রয়েছে। খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। সকালে
ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে সমাধান
পাওয়া যায়। খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নীচে আলোচনা
করা হলো-
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ নিম পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।
- হজম শক্তি উন্নত করেঃ নিম পাতার রস হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস ও বদহজম দূর করতে সহায়ক।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ নিম পাতার মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিক, উপাদান রয়েছে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
- ত্বকের যত্নে কার্যকরঃ নিম পাতার অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ব্রণ, চুলকানি ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যার সমাধানে কার্যকর।
- ওজন কমাতে সহায়কঃ নিম পাতার রস শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়। যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই খালি পেটে সকালে নিম পাতা খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেক।
- রক্ত পরিশোধনী সাহায্য করেঃ নিম পাতার রস রক্ত পরিশোধন করে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে।
- যকৃত কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধিঃ নিম পাতার উপাদান যকৃত কিডনিকে সুস্থ রাখে এবং ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
- মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা করেঃ নিম পাতার অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুনদাদের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ নিয়মিত নিম পাতার রস খেলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে সহায়তা করে।
- দেহ থেকে টক্সিন দূর করেঃ নিম পাতার রস লিভার ক্লিনজিং প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে এবং শরীরকে টক্সিন মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধে নিম পাতার ভূমিকা
নিম এমন একটি গাছ যে গাছের ডাল পাতা রস কাজে লাগে। শুধু নীম দিয়েই নিরাময় হয় ২০ থেকে ২২ টি রোগের নিমের পাতা থেকে আজকাল প্রসাধনীয় তৈরি হচ্ছে। কৃমিনাশক হিসেবে নিমের রস খুবই কার্যকর। নিম পাতার রস খেলে অনেক ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
খালি পেটে নিমপাতা রস খেলে যে রোগের নিরাময় হয় সেগুলা নিম্ন আলোচনা করা হলো-
চুলকানিঃ নিম পাতা চুলকানি রোগ ভালো করে।
কৃমিনাশকঃ নিম পাতার রস খেলে কৃমি দূর হয়ে যায়।
ত্বকঃ নিম পাতা ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় ব্রণ দূর
হয়।
দাঁতের রোগঃ নিম পাতার যেমন গুণাগুণ রয়েছে তেমনি নিমের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করলে
দাঁতের রোগ ভালো হয়।
রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণঃ খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে রক্তের সুগার লেভেল
নিয়ন্ত্রণে থাকে।
চুলঃ চুলের খুশকি দূর করার জন্য নিম পাতার গুরুত্ব অনেক। উকুন সমস্যা দূর করার
জন্য নিমপাতা ব্যবহার করা হয়।
ওজন কমাতেঃ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রক্ত পরিষ্কারঃ খালি পেটে প্রতিদিন সকালে নিম পাতার রস খেলে রক্ত পরিষ্কার
থাকে।
ঠান্ডা জনিত বুকের ব্যথাঃ ঠান্ডা জনিত বুকের ব্যথার জন্য প্রতিদিন নিম পাতার রস
খাওয়া জরুরী।
এলার্জিঃ সমস্যা নিম পাতা ফুটিয়ে সে পানিতে গোসল করলে এলার্জি ভালো হয়ে
যায়।
প্রতিদিন নিম পাতা খেলে কি হয়
খালি পেটে নিমপাতা রস খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এই গাছটির প্রতিটি অংশ খুবই উপকারী।
টানা প্রতিদিন নিম পাতার রস খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের
সংক্রমণ বিধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। প্রতিদিন খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে
যে উপকার হয় সেটা নিচে দেওয়া হল-
ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে
নিম পাতার উপস্থিত এন্টিভাইরাল শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কাজ দেখায় যে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে ওঠে ফলে স্বাভাবিকভাবে ছোট বড় অনেক রোগ ধারে ঘেষতে পারে না এবং আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে
শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে
কখনো খাবারের মাধ্যমে তো কখনো অন্যভাবে আমাদের শরীরে টক্সিন উপাদানের প্রবেশ ঘটে
এসব ক্ষতিকর উপাদান গুলোকে যদি সঠিক সময় শরীর থেকে বের করে নেয়া হয় তাহলে
কিন্তু বিপদ নিম পাতার তাই প্রতিদিন নিম পাতা খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে প্রতিদিন
খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে শরীর থেকে টক্সিন দূর হয়ে যায়
পেটে সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে
খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই
প্রাকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত নানা বিধি উপকারী উপাদান শরীরের প্রবেশ করা মাত্র
পাকস্থলীতে উপস্থিত খারাপ ব্যাকটেরিয়া সব মারা পড়ে। ফলে একদিকে যেমন পেট খারাপ
হওয়ার সংখ্যা কমে তেমনি গ্যাসের মত সমস্যা কমে যায়।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে
খালি পেটে নিম পাতা খাওয়া শুরু করলে রক্তের উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান গুলো ধ্বংস
হয়ে যায়। সেই সঙ্গে টক্সিক উপাদানেরাও বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ফলে ত্বকের
সৌন্দর্য বাড়ে। সে সঙ্গে কোন ধরনের ত্বকের সংক্রণে আক্রান্ত হওয়ার
আশঙ্কা আর থাকে না।
নিম পাতা ব্যবহারের ক্ষতির দিক
নিম পাতা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখানে উল্লেখিত নিমের অসুবিধা গুলো
অতিরিক্ত খাওয়ার উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ভরা পেট বা খালি
পেটে নিমপাতা খাওয়ার ক্ষতি উভয় ক্ষেত্রে হতে পারে। নিচে খালি পেটে নিমপাতা
খাওয়ার কিছু অপকারিতা দেওয়া হল-
- খালি পেটে অতিরিক্ত পরিমাণে নিম পাতা খেলে বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া হতে পারে
- খালি পেটে গর্ভবতী মহিলাদের নিমপাতা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়
- খালি পেটে দীর্ঘদিন যাবত নিম পাতা খেলে লিভারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে
- খালি পেটে প্রতিদিন নিম পাতা খেলে এলার্জির সমস্যা হতে পারে
নিম পাতার রস খাওয়ার সঠিক নিয়ম
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ নিম পাতার রস পান করা ভালো। একটানা তিন থেকে
চার সপ্তাহ খাওয়ার পর কিছুদিন বিরতি নেন। কারণ নিয়মিত ভাবে নিমপাতা খেলে বিভিন্ন
ধরনের সমস্যায় ভুগতে পারেন। নিম পাতার রস কিভাবে খাওয়া যায় তার নিয়ম
নিচে দেওয়া হল-
- নিম পাতার ডাল থেকে ছড়িয়ে শিলপাটের পেটে মিহি করে নিতে পারেন
- রোদে শুকিয়ে গুড়া করেও নিম পাতা খাওয়া যায়
- কাঁচা পাতা প্রতিদিন আপনি খেতে পারেন
- চাইলে প্রতিদিন একটি করে নিম ক্যাপসুলও খেতে পারেন
নিম পাতার রস তৈরির পদ্ধতি
নিম পাতা বেটে ট্যাবলেট বানিয়ে শুকিয়ে বেশ কিছুদিন সংরক্ষণ করা যেতে পারে। তবে সংরক্ষণের সময়কাল মূলত পরিবেশের আদ্রতা তাপমাত্রা এবং ট্যাবলেট তৈরি ও সংরক্ষণের পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। সাধারণত শুকনো নিম পাতা ট্যাবলেট যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয় তাহলে তা তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকতে পারে।
তবে সংরক্ষণের সময় যদি ট্যাবলেট কোন ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় তাহলে তা
খাওয়া উচিত নয়। সংরক্ষণের সময়কাল বাড়ানোর জন্য নিম পাতা সম্পন্নভাবে নিশ্চিত
করতে হবে। কারণ আদ্রতা ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক এর বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। সংরক্ষণের
আগে ট্যাবলেট গুলিকে প্যাকেট বা কন্টেইনারে রাখলে এগুলো আরো দীর্ঘ সময় ধরে ভালো
থাকতে পারে।
নিম পাতার পুষ্টিগুণ
নিম পাতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ। এটা শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষ করে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে বিভিন্ন ধরনের
স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
নিম পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে নিচে দেয়া হল-
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- ভিটামিন সি
- ক্যারোটিন
- ক্যালসিয়াম
- আইরন
- ফসফরাস
পাঠকের শেষ কথা
খালি পেটে নিমপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত উপরে আলোচনা
করা হয়েছে। কিছু জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন এর অপকারিতা রয়েছে
খালি পেটে নিমপাতা খেলে যেমন উপকার হয় তেমন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা নিশ্চয়ই খালি পেটে
নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা বিস্তারিত পড়েছেন। খালি পেটে নিমপাতা খাওয়ার সময় এর
পরিমাণ মাথায় রেখে খেতে হবে। এক্ষেত্রে নিরাপদ মাত্রার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ
নেয়া খুবই জরুরী। এ ধরনের স্বাস্থ্যমূলক আর্টিকেল পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে
ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url